শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

অর্থপাচার বেড়েছে ৬৫ শতাংশ : ৮০ শতাংশই ব্যাংকের মাধ্যমে

বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪
27 ভিউ
অর্থপাচার বেড়েছে ৬৫ শতাংশ : ৮০ শতাংশই ব্যাংকের মাধ্যমে

কক্সবংলা ডটকম(২০ মার্চ) :: বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছরই অর্থপাচার বাড়ছে। সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার পরও দেশ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থপাচার থামাতে পারছে না সরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশ থেকে অর্থপাচার বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। এর ৮০ শতাংশই হয়েছে ব্যাংকের মাধ্যমে।

রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর দুর্বল নজরদারি ও আইনের শাসনের ঘাটতির কারণে পাচার থামছে না বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

তারা জানান, তদন্তে অস্পষ্টতা এবং দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়ার কারণেই বেড়েছে অর্থপাচার। অর্থপাচার রোধ করতে হলে দুর্নীতি কমিয়ে বিনিয়োগের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত বিএফআইইউর বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশ থেকে যত অর্থপাচার হয়েছে তার ৮০ শতাংশই হয়েছে ব্যাংকের মাধ্যমে।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৪ হাজার ১০৬টি সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব লেনদেনে অর্থের পরিমাণ ছিল ২২ লাখ ৮৫ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি। একই অর্থবছরে অর্থপাচারের ৫৯টি মামলা হয়েছে।

বিএফআইইউর প্রধান কর্মকর্তা মো. মাসুদ বিশ্বাস বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা ও সহযোগিতার জন্য ১০ দেশের সঙ্গে এমওইউর করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

তিনি জানান, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকগুলো মোট ৩ কোটি ৮৬ লাখ নগদ লেনদেনের তথ্য জমা দিয়েছে। এসব লেনদেনে অর্থের পরিমাণ ছিল ২২ লাখ ৮৫ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা।

নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ২১০ কোটি টাকার ১ হাজার ২৩৮টি নগদ লেনদেনের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

বিএফআইইউ প্রধান বলেন, সব সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) অপরাধ নয়। লেনদেন সন্দেহজনক হলে তদন্ত করি। যদি কোনো অপরাধের তথ্য-প্রমাণ মিলে তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই।

এ সময় তিনি জানান, বিএফআইইউর তথ্যের ভিত্তিতে অর্থপাচারের মামলা হয়েছে ৫৯টি। এর মধ্যে দুদক মামলা করেছে ৪৭টি, সিআইডি ১০টি এবং এনবিআরের বিশেষ সেল ২টি। এগুলো এখনো

নিষ্পত্তি হয়নি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিএফআইইউয়ের কাছে দুদক, পুলিশের বিভিন্ন দপ্তর, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ১০৭৫ বার আর্থিক তথ্য পাওয়ার আবেদন করেছে। মুদ্রা পাচারের মতো সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য দেয়ার হারও বেড়েছে। গত অর্থবছরে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার কাছে নব্বইবার তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ।

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে মাসুদ বিশ্বাস বলেন, মানি লন্ডারিং একটা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম। এখানে বহুপক্ষ ও বহু দেশ জড়িত থাকে। আমাদের দেশের আইন আর অন্য দেশের আইন এক নয়। আমরা কিছু আছি সিভিল ল কান্ট্রির দেশ, কিছু আছে কমন ল কান্ট্রির দেশ। এটা নিয়েও ভাবার আছে। আমরা ২০১২ সালে এমএলএ-অ্যাক্ট করেছি। আমরা ১০টি দেশে এমএলএ করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটা নিয়ে কাজ করছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পাচার হওয়া দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, হংকং-চীন। এই ১০ দেশের সঙ্গে পারস্পরিক আইনগত সহায়তা চুক্তির (এমএলএ) ঘোষণা দিয়েছে বিএফআইইউ। ইতোমধ্যে সরকারকে এ বিষয়ে প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে। সরকারের সম্মতির পর দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চুক্তি সম্পন্ন হবে।

বাংলাদেশ থেকে যেসব চ্যানেলে টাকা বেরিয়ে গেছে এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মূল কারণ চিহ্নিত করেছেন দেশের অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা। এর মধ্যে পণ্য আমদানির সময় কাগজপত্রে বেশি দাম উল্লেখ করে টাকা পাচার। আরেকটি হচ্ছে পণ্য রপ্তানি করার সময় কাগজপত্রে দাম কম দেখানো। পাশাপাশি হুন্ডির মাধ্যমে বিশাল একটি অঙ্ক পাচার হচ্ছে। এছাড়া দুর্নীতি, কালো টাকা বেড়ে যাওয়া, বিনিয়োগের পরিবেশ না থাকা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণেও অর্থপাচার বাড়ছে।

নানা পদক্ষেপ নেয়ার পরও অর্থপাচার কমছে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থপাচারের মূল কারণ দুর্নীতি। অর্থপাচার বন্ধ করতে হলে দুর্নীতি সমূলে উৎপাটন করতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। দেশে দুর্নীতি বন্ধ করা না গেলে অর্থপাচার বন্ধ হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশ থেকে যে অর্থপাচার হচ্ছে তার সিংহভাগই বিদেশি বাণিজ্যের মাধ্যমে হচ্ছে। আমদানি-রপ্তানির আড়ালে আন্ডার ইনভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে অর্থপাচার হচ্ছে। মূলত আমদানিতে বেশি মূল্য ও রপ্তানিতে কম মূল্য দেখিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থপাচার করা হয়।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে অন্য প্রতিষ্ঠানের নামে রপ্তানির অনুমতিপত্র জালিয়াতি করে পণ্য পাঠানো হয়েছে। আর যে মূল্যের পণ্য পাঠানো হয়েছে, তার চেয়ে কম মূল্য দেখানো হয়েছে। শুল্ক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অর্থপাচারের ঘটনা বেশি ঘটছে তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে। দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক থেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, পণ্য আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলেই বিদেশে পাচার হচ্ছে। পণ্যের মূল্যের বিপরীতে পাঠানো অতিরিক্ত অর্থ পরে বিদেশে আমদানিকারকের পক্ষে কেউ নিচ্ছে, এমন অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই অর্থনীতিবিদদের কাছ থেকে আসছে।

আগে ব্যাংকগুলো ঋণপত্র (এলসি) খোলার সময় পণ্যের দাম যাচাই করত না। এখন ব্যাংকের কর্মকর্তারা পণ্যের দাম যাচাই করে এলসি খুলছেন। এতে পাচার কমেছে। যারা রপ্তানিকারক, তারাও কিন্তু রপ্তানির টাকা দেশে না এনে সেখানে রেখে দেন। এটাও মানি লন্ডারিং।

জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকার আন্তরিক হলে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার উদাহরণ আছে। ২০১৩ সালে সিঙ্গাপুর থেকে ২০ কোটি ৮৮ লাখ ৭০ হাজার টাকার সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা ফেরত আনা হয়েছিল।

সেই ঘটনার পর আর কোনো টাকা দেশে ফেরত আসেনি। সুতরাং সরকার আন্তরিক কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন। তিনি বলেন, আমাদের সংসদে এখন ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য। ফলে তাদের বিরুদ্ধে কীভাবে ব্যবস্থা নেবে? এটাও একটি বড় প্রশ্ন।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, দিনকে দিন দেশ থেকে অর্থপাচার বাড়ছে। বিএফআইইউ এ বিষয়ে যে তথ্য দিয়েছে তার ভিত্তিতে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া সরকারের সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। পাশাপাশি বিদেশের সঙ্গে আমাদের এগমন্ড চুক্তিগুলোও কার্যকর করতে হবে। দৃশ্যমান আইনি প্রয়োগ থাকতে হবে।

তিনি বলেন, হুন্ডি হাওলার মাধ্যমে একটি বড় অঙ্কের টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এ চক্র ভাঙতে বছর খানে আগে একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময় তার আর কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। এদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

27 ভিউ

Posted ১:১৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com